সাউথ আমেরিকানরা অন্যান্য যেকোন জায়গার চেয়ে ধর্মের ব্যাপারে অনেক বেশী এক্সপ্রেসিভ। খোদ ভ্যাটিকানে কেউ ক্যাথলিকইজমের এমন খোলামেলা প্রদর্শনী করে চলে না। যিশুর ছবিওয়ালা লকেট, তাবিজ, ক্রস, ট্যাটু থেকে শুরু করে তাদের উৎসবগুলোও অন্যান্য ক্যাথলিক সোসাইটির তুলনায় বেশ ভাইব্রেন্ট।
অথচ এই নতুন পৃথিবীতে ইউরোপের উপনিবেশিক শক্তিগুলো নিজ নিজ দেশের যত্তসব চোর, বাটপার, খুনির মত দাগি আসামীদের জাহাজের খোলে ভরে ভরে রেখে আসত। আবার পনেরশ ষোলশ শতাব্দীতে পাপাল স্টেটের নোংরা কুটনীতির ফলে স্পেন-পর্তুগাল-ফ্রান্সের মত রাস্ট্রগুলোতে প্রটেস্টান্টদের দমন নীতি চালু হয়। সেই সময় কিছু ভাগ্যবান লুকিয়ে টুকিয়ে ‘নতুন পৃথিবী’তে আশ্রয় নিতে পারলেও সেইভাবে তাদের পাপাল মনোপলি বিদ্রোহী বিশ্বাসটা চোর চোট্টাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে নাই কেন জানি! ঘুরে ফিরে ইউরোপিয়ান সাদা সেটেলাররা লাল সালু পরা পোপকেই তাদের ত্রাতা হিসেবে গ্রহণ করে নেয়।
কোন জনগোষ্ঠী কোন আচারকে মান্যতা দিবে আর কোনটা বাতিল করে দিবে এই ইকুয়েশন বোধ হয় কোন লজিক মেনে চলে না। ধর্ম বর্ণ ভূগোল বুঝিয়ে কোনভাবে গোজামিল দিয়ে সমীকরণটা ব্যাখ্যার চেষ্টা করা যায় মাত্র। বুল ফাইটিংয়ের কথাই ধরা যাক। এই একবিংশ শতাব্দীতেও স্পেনে বুল ফাইটিং একটি মারাত্মক জনপ্রিয় খেলা(!)। আবার স্পেনের দক্ষিন আমেরিকান শাখার একটি অংশ আর্জেন্টিনাতেও একসময়ে জনপ্রিয় ছিল এই খেলা। ১৮১৬ সালে স্পেন থেকে স্বাধীন হবার পর ওদের আর এই খেলা পোষায়নি। ধীরেধীরে এর জনপ্রিয়তা কমে যায়, পরে তো আর্জেন্টাইন সরকার মানবিক কারণ দেখিয়ে পুরো খেলাটিকেই ব্যান করে দেয়। স্পেন-আর্জেন্টিনা এরা তো আদতে একই জাতি, মাত্র চার পাঁচ প্রজন্মের ব্যবধানে কত কিছুই না পাল্টে যায়, দেশ-জাতি-পরিচয়-পছন্দ!
এদিকে পুরো ল্যাটিন আমেরিকায় ফুটবলের আগমন কিন্তু স্পেন-পর্তুগালের বিদায়ের পর হয়! দক্ষিন আমেরিকায় সেটেল করা ইউরোপীয়রা নিজ নিজ রাজার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে অবশেষে উপনিবেশের অবসানের পর এই অঞ্চলে ঢুকে ব্রিটিশরা। হামবোল্টের এই নতুন পৃথিবীতে ব্রিটিশরা কোন এক অদ্ভুত কারণে নিজেদের পলিটিক্যালি এনগেইজ করে নাই! এখানে তারা মূলত ফড়িয়া হয়েই এসেছিল তারা। দেশ দখল করা, রানীর শাসন প্রতিষ্ঠা করা, পাপীদের দ্বীনের পথে নিয়ে আসা, লুটপাট করা এসবে তারা ইন্টারেস্টেড ছিল না! কারণ এর আগেই স্পেন আর পর্তুগাল তাবৎ অঞ্চলকে অলরেডি ছিবড়ে বানিয়ে ফেলেছিল, নতুন করে আর কি করবে তারা- হুদাই টাইম লস!
স্পেনিশ-পর্তুগীজ কলোনিগুলোর লোকজন ব্রিটিশ ফড়িয়াদের দেখে ফুটবলকে এডপ্ট করে নিয়েছিল, অন্যদিকে প্রতিবেশী ব্রিটিশ কলোনির ক্যারাবিয়ান দীপপুঞ্জগুলোয় এঈ যেমন বার্বাডোজ, এন্টিগুয়া্র আখ ক্ষেতে মাগনা কামলা দিতে আফ্রিকা থেকে ধরে আনা দাসেরা মজলো গিয়ে জেন্টেলম্যান্স গেইম, ক্রিকেটে! অনেকে বলে ফুটবল খেলতে এক বল ছাড়া আর কিছু লাগে না এ কারণেই পৃথিবীজোড়া এর জনপ্রিয়তা, অন্যদিকে ক্রিকেট খেলতে ব্যাট লাগে, বল লাগে, স্ট্যাম্প লাগে, প্যাড লাগে, গ্লাভস লাগে, গার্ড লাগে, হেলমেট লাগে আরও কত কি! তারপরেও গরীব দাসের বংশধরেরা ফুটবল রেখে ক্রিকেট ধরল- এর লজিক্যাল ব্যাখ্যা কি হতে পারে?