হিমালয়ের এই জায়গাটায় এসে থমকে গিয়েছিলাম। বারবার মনে হচ্ছিলো, কেউ আমাকে টেলিপোর্ট করে দিয়েছে আন্দিজের দুর্গম কোন পর্বতে, যেখানে সূর্যদেবের বন্দীদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
ইউরোপীয় কলোনিয়ালদের অন্যায় অত্যাচার হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে আন্দিজের এমনই কোন পর্বতের ঢালে সত্যি সত্যি হয়ত শতাব্দী কাল ধরে লুকিয়ে আছে ইনকাদের একটি ট্রাইব। টিনটিনের মত আমিও তাদের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছি।
আন্দিজের ঠান্ডা বাতাস, চারিদিকে মাথা উঁচু করে থাকা শ্বেতকায় চূড়া, চড়াই উৎরাই পথ, গর্জন করে নেমে আসা নদী পেড়িয়ে পেয়েছি এক প্রাচীন মানমন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। পাথরের এই স্তুপের ভিতরেই লুকিয়ে আছে অন্য এক দুনিয়ায় প্রবেশের চাবিকাঠি।
এই মুহুর্তে আবারো মনে হল টিনটিনের সবগুলো কমিক্সের মধ্যে সূর্যদেবের বন্দী বইটিই আমার কেন সবচাইতে প্রিয়। এটি নিছক কোন অ্যাডভেঞ্চারের গল্প হয়ে রয়ে যায়নি। এই বইটির পাতায় পাতায় থাকা আন্দিজের সংস্কৃতি ও ইতিহাস আমাকে সেই ছোটবেলা থেকেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এত বিস্তারিত ও নিখুঁতভাবে ইনকা সভ্যতা, তাদের চালচলন, পোশাক আশাক তুলে ধরা হয়ে যা হার্জের অন্যান্য কাজের মাঝে তেমন পাওয়া যায় না।
ইনকা সভ্যতা ছোট ছোট বিষয়গুলো, যেমন ইনকাদের রিলিজিয়াস প্র্যাক্টিশ, পাহাড়ের উপরে পাথরের দিয়ে বানানো তাঁদের আর্কিটেকচারাল মার্ভেল, তাঁদের কিংবদন্তিগুলো পুরো বইটিকে এমন এক গভীরতা ও অথেনটিক একটি ভাইব নিয়ে এসেছে, যা এত বছর পর আর এত বয়স হয়ে যাবার পরেও সেই ছোটবেলার মতই আমাকে আলোড়িত করতে পারে।
টিনটিনের আর কোন বইয়ের মাঝে এত কালারফুল ও প্রানবন্ত আর্টওয়ার্ক আমি পাইনি। আমার কাছে সূর্যদেবের বন্দী হার্জের সেরা কাজ মনে হয়। পুরো বই জুড়ে ব্যবহার করা রঙিন কম্পোজিশনগুলো কল্পনায় হারিয়ে যেতে বাধ্য করবেই। বইয়ের প্রতিটি চরিত্র খুবই প্রানবন্ত ও তাদের চেহারার এক্সপ্রেশনগুলো এত চমৎকারভাবে আকা হয়েছে যে কি বলব। আর ল্যান্ডস্কেপের জাদু থেকে যে আমি এখনও বের হতে পারিনি সেটা লেখার প্রথম প্যারা পড়েই হয়ত বুঝেই গেছেন।
থ্রিলিং অ্যাডভেঞ্চার, রহস্য সন্ধানের সীমাহীন কৌতুহল, ইতিহাস ও সংস্কৃতির গভীরতা সূর্যদেবের বইটিকে একটি ক্ল্যাসিকে পরিনত করেছে। সববয়সী পাঠকদের জন্য এই বইটি তাই মাস্ট রিড।