পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ চূড়া কাঞ্চনজঙ্ঘার এই ছবিটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে, ঠিক গোধূলি মুহুর্তে ভারতের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় ইন্টার ন্যাশনাল স্পেস স্টেশন ISS থেকে তোলা হয়েছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা ও তার আশপাশের চূড়াগুলো সূর্যের রক্তিম আলোতে রাঙিয়ে সূর্য তখন এই গোলার্ধ থেকে বিদায় নিচ্ছে। শ্বেত শুভ্র শৃঙ্গে রক্তিম আলোর এই ঐশ্বরিক বিচ্ছুরণের জন্য ইংরেজীতে খুব চমৎকার একটা শব্দ আছে, Alpenglow। প্রকৃতির মায়াবি এই উদযাপনের বাংলায় কি এমন কোন আলাদা নাম আছে?
পদার্থ বিজ্ঞানের একটা কমন প্রশ্ন ছিল সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় আকাশ লাল হয় কেন? সত্যি বলছি, পরীক্ষার খাতায় এর উত্তর মুখস্থ উগলে দিলেও প্রকৃতির এই ঘটনাটি কখনোই উপলব্ধি করিনি। তার ও অনেক বছর পর প্রথমবার যখন ব্যাম্বুর ঠিক আগে গোধূলিলগ্নে মাচ্ছাপুচ্ছেরের লেজের উপর লাল রশ্মির ঝলক দেখেছিলাম তখনই কেবল প্রকৃতির এই অদ্ভুত ফেনোমেমনটা মন থেকে উপলব্ধি করতে পেরেছি।
শুধু আলোর বিচ্ছুরনের এই বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেই না। প্রকৃতির আরও খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে আমার মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে। এতদিন সাধারণ যেই বিষয়গুলো পাত্তাই দিতাম না সেগুলোর অসাধারণত্ব আমার চোখে শরা পড়তে লাগল। আপাত সাধারণ বিষয়েও আমি উৎসুক হয়ে উঠতে লাগলাম। অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, এতদিন যা পরীক্ষায় পাস করার জন্য পড়ে এসেছি প্রকৃতির এই মিস্টিক ব্যাপারগুলোর অনেকখানি উত্তর সেইসব বোরিং টেক্সটবুকের মধ্যেই আছে। কি আজিব!
এখন প্রায়ই আফসোস হয়, ছোটবেলা থেকেই যদি আমার বাপ মা আমাকে পাহাড়ে হাইকিং ট্রেকিংয়ে নিয়ে যেত কতই না ভাল হত। ছোটবেলা থেকেই তাহলে পড়ালেখায় মনোযোগী হয়ে উঠতাম। পরীক্ষায় পাসের জন্য না, জীবনকে জানার জন্য যে লেখাপড়া করতে হয় সেটাই তখন শিখতাম। বাবা মা’র এক্সপেক্টেশন, ভয়, শিক্ষকদের চোখ রাঙানি বা পরীক্ষায় পাসের জন্য নয়, ভালোবেসেই তখন লেখাপড়া করতাম। কত সহজেই তখন টেক্সট বুকের সাথে বাস্তব উদাহরণগুলো রিলেট করা যেত। যুদ্ধ করে আর মুখস্ত করা লাগত না, সূত্রগুলো মনে গেঁথে যেত।
ছবি: জন সাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত নাসার পাবলিক ডোমেইন থেকে।