আজকে অনেক ক্লান্ত ছিলাম। শুয়ে শুয়ে নেটফ্লিক্সে কী দেখা যায় ভাবছি, কিছুই পছন্দ হচ্ছে না। হালকা ফুলকা ফিলগুড টাইপ কিছুই দেখতে চাচ্ছিলাম, খুব মাথা খাটাতে হবে এমন কিছু দেখতে ইচ্ছা করছিল না। ন্যাচেরালি কিছুই খুঁজে পেলাম না। মনমত কিছু না পেয়ে ভাবলাম তাইলে একটা মার-কাটারি তামিল মুভি দেখি। সদ্যই নেটফ্লিক্সে এসেছে তামিল সিনেমা- জিগার ঠান্ডা ডাবল এক্স। জনরা অ্যাকশন কমেডি।
শুরুতেই সিনেমার চরিত্র, ডায়লগ, মারামারির সিকোয়েন্স মানে পুরো আবহ দেখে বুঝে যাবেন এটা তামিল গ্যাস্টার গাংয়ের গল্প। কিন্তু সিনেমার শুরুটা একটু কেমন যেন। খাপছাড়া একটা ভাব আছে। অনেকগুলো টুকরো টুকরো গল্প আর চরিত্র ধুমধাম করে গল্পে চলে আসে। এতগুলো চরিত্র আর গল্পের পারস্পরিক সম্পর্ক বুঝতে ও মনে রাখতে কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু এডিটরের চমৎকার মুন্সিয়ানায় সিনেমাটি দেখে গেছি। আমার অনুরোধ প্রথম দিকে ভালো না লাগলেও দেখতে থাকুন।
এই গল্প সিনেমা নির্ভর। পলিটিকাল লিডারদের ছত্রছায়ায় কাজ করা সন্ত্রাসী বাহিনীর লিডার নিজের উপর একটি সিনেমা বানাতে চায়, অটোবায়োগ্রাফি। এতেও বোঝা যায় কমেডি ধাঁচেই গল্প এগিয়েছে। এরপর পরিচালক তাঁর নিজের স্কিল দেখাতে শুরু করেন, সিনামার প্রভাবে সন্ত্রাসীর মনে পরিবর্তন আসে। চরিত্রকে জাজ করতে পারার আগেই আমি সন্ত্রাসীর পার্সপেক্টিভ থেকেও গল্পটা দেখতে থাকি।
এই সিনেমায় যারা অভিনয় করেছেন বিশেষ করে লরেন্স ও সুরাইয়ার অভিনয় চমৎকার লেগেছে। তাঁদের অভিনয় এত ফ্ললেস ছিল যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। চরিত্রগুলো মাথায় পোকার মত থেকে যাবে বেশকিছু দিন। কাল্ট সিনেমার রেফারেন্স, মিউজিক, সিনেম্যাটগ্রাফি কালার গ্রেডিং সবই বেশ ভালো লেগেছে। আধুনিক টপ নচ ভিএফক্সের যুগে সিনেমার গ্রাফিক্স কিছুটা ম্লান লাগতে পারে- কিন্তু আমার কাছে তাতে সিনেমায় হারিয়ে যেতে কোন সমস্যা হয়নি। খুবই এন্টারটেইনিং একটি সিনেমা এক্সপেরিয়েন্স ছিল।
আমাদের সবার এই সিনেমাটি দেখা দরকার। বাসার বাচ্চাকাচ্চাদেরও গাইডেয়েন্সের সাথে সিনেমাটি দেখানো যায়। যেই মানুষদের এক্সিসট্যান্সের কথা আমরা জানিই না তাঁদের গল্পগুলোর সাথে আমাদের কানেক্ট হওয়া দরকার। একইসাথে আমাদের বোঝা দরকার আমাদের সচেতনতা তাঁদের উপর কিভাবে ইম্প্যাক্ট ফেলে। এই সমাজে আমাদের কী ভূমিকা থাকতে পারে এটা নিয়েও আমাদের ভাবনা জাগ্রত করতে পারে।
সিনেমাটি দেখে অনেকগুলো ভাবনা মাথায় চলে এসেছে। কিন্তু পুরো ভাবনার কথা লিখতে গেলে সিনেমার কাহিনী চলে আসবে, তাই আপাতত স্পয়লার দিচ্ছি না। শুধু এতটুকু বলি, সিনেমা পরিচালক তাঁর মাথায় চলমান একটি চিন্তা কত স্পষ্ট আর ক্রিয়েটিভলি এক্সপ্রেস করতে পারে আর সিনেমা কত শক্তিশালী একটা মাধ্যম হতে পারে এই সিনেমাটি তারই প্রমাণ। সিনেমা যেমন অ্যানিমেলের গল্প বলতে পারে তেমনি জিগার ঠান্ডার মত দর্শকদের সামনে কঠিন একটি প্রশ্নও ছুড়ে ফেলতে পারে। এমন ফ্যান্টাসিক একটা সিনেমা উপহার দেয়ার জন্য পরিচালক সহ সকল ক্রুকে ধন্যবাদ জানাই।
সিনেমা দেখে কারও মাইন্ডসেট হয়ত রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে যায় না, কিন্তু আমাদের কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভাবাতে পারে।