অনুসন্ধান

সমতলের মানুষ হিসেবে পাহাড় পর্বতে চড়ে বেড়ানো আমার কাছে বেশ ক্লান্তিকর মনে হয়। শুধু শারীরিকভাবেই যে ক্লান্ত লাগে তা না, পাহাড় মানসিক দিক থেকেও প্রচন্ড রকম পরীক্ষা নেয়। তার পরেও কেন বারবার এর পিছনে ছুটে যাই?

যুগ যুগ ধরে পর্বতারোহীদের এই প্রশ্ন তাড়া করে ফিরছে। কেউ কেউ এই প্রশ্নের খুব ভাল রকম উত্তর দিয়ে গেছেন। আবার কেউ কেউ জবাব দিতে গিয়ে থমকে গিয়েছেন। অদেখা পৃথিবী আবিষ্কার, রোমাঞ্চ, এড্রিনালিনের প্রভাব ইত্যাদি নানাভাবে দার্শনিক ও মনস্তত্ববিদেরা এই আকর্ষণকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। তবুও মনে হয় না কেউ ঠিক সবার জন্য মনপুত কোন জবাব দিতে পেরেছে।

কয়েক বছর আগেও কেউ প্রশ্ন করলে মুচকি হেসে হয়ত জবাব দিতাম, এইতো ভালো লাগে তাই যাই। কিন্তু কেন যে ঠিক ভাললাগে সেটা সত্যিকার অর্থে বুঝতে পারতাম না। পরিবার পরিজন, ক্যারিয়ার, আরামের জীবন ছেড়ে কিসের আকর্ষণে যে ছুটে বেড়াচ্ছিলাম সেটাও আমার কাছে স্পষ্ট ছিল না। তবে টের পাচ্ছিলাম আমার মধ্যে বড় রকমের পরিবর্তন আসছে।

এমন না যে একেবারে রাতারাতি আমি পরিবর্তন হয়ে গেছি। এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া খুব ধীরে ধীরে আমার স্নায়ুর উপর প্রভাব ফেলেছে। পাহাড়ে রোমাঞ্চকর মুহুর্তগুলোতে স্নায়ু স্বাভাবিকের চাইতে সক্রিয় হয়ে উঠতে লাগল। আমি এমন সব বিষয় দেখা শুরু করলাম যা স্বাভাবিক অবস্থায় আমার সামনে থাকা স্বত্তেও নজর দিতাম না। আমার অনুভূতিগুলো দিন দিন প্রবল থেকে প্রবলতর হতে লাগল। কোন ঘটনাকে দেখার, সেটা বিবেচনা করার পার্স্পেক্টিভ পালটে গেল।

এক এক সময় মনে হত আমি আমার দৃষ্টিসীমার বাইরেও অনেক কিছু দেখতে পারছি। এন্টেনার আমলে দূরদর্শনের মত ঝিরঝির একটি আবছায়া চিত্র আমার সামনে ভেসে বেড়ানো শুরু করল। মাঝে মাঝে এন্টেনা এডজাস্ট হলে ছবিটি পরিষ্কার হয়ে উঠত, আবার পরক্ষণেই সেই সংযোগ ছিন্ন হয়ে যেত। এমন সময়ে অদ্ভুত এক বিষাদে মন ছেয়ে যেত। ক্লান্তি ছড়িয়ে পড়ত পুরো শরীরে।

যত দিন যাচ্ছে এই চ্যানেলের টিউনিং করা আয়ত্বে চলে আসছে। এই আয়ত্বে চলে আসাটা আমার ভ্রান্তিও হতে পারে। কিন্তু মনে হচ্ছে আমার সামনে এই ভেসে বেড়ানো চিত্রগুলো দিন সিন পরিষ্কার হয়ে উঠছে। আমি আমার নিজের মনের কথাগুলো পড়তে পারছি। প্রায়শই সেগুলোর জবাবও আমার অবচেতনে থাকা আরেক আমির কাছে পেয়ে যাচ্ছি। যতদিন যাচ্ছে ততই আমি এই মন ও মস্তিষ্কের সংযোগের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছি। এটা অনেকটা রিডেলের মত। এই ধাঁধাঁর উত্তর মিলাতে পারলেই প্রশান্তি পাওয়া যায়।

এই বিষয়ে কিছু বলতে পারা খুব কঠিন। কিছু লিখা তো আরও কঠিন। তবে ভিতরে যে কিসব ভাবনা গিজগিজ করে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!