ডিসপ্যাচ [দুই]

দীর্ঘ দুই বছর পর আজ একটু শীতের আমেজ পাচ্ছি। এখন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের দুই ডিগ্রি নিচে আছে। রাত বাড়লে আরেকটু কমবে। আমি আর আনিকা সাড়ে তিন হাজার মিটার উপরের একটি পাহাড়ের স্যাডেলে রাত কাটাচ্ছি। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ চলছে তবুও এখানে সেখানে স্নো প্যাচ ছেয়ে আছে। দুপুরের সাংঘাতিক রোদেও এই তুষারগুলো গলে কেন যায়না এটি এখনো আমার কাছে রহস্য। নিশ্চয় এর পিছনে কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে কিন্তু এই উত্তরটি জানতে খুব একটা আগ্রহও জাগে না। প্রকৃতির কিছু বিষয় রহস্যই থাকুক, বিস্মিত হতে খারাপ তো লাগে না।

নেপালে আজ আমাদের নবম রাত। বিগত কয়েকটি দিন আমি ও আনিকা হিমালয়ের ছোট্ট একটি শেরপা গ্রামে অপূর্ব কিছু সময় কাটিয়েছি। হানিমুনের জন্য জায়গাটি হয়ত পশ ছিল না, কিন্তু হিমালয়ের কোলে একে অপরের সান্নিধ্য একটু অন্যরকম ভালোলাগা। গত কয়েকটাদিনের রুটিন ছিল- অল্প একটু ট্রেকিং, শুয়ে বসে বই পড়া, প্রথমআলোর জন্য বিশাল একটি আর্টিকেল লেখা, গানশোনা, পাড়া বেড়ানো, আশে পাশের ঝিরি এক্সপ্লোর করা, মুভি দেখা, শেরপাদের খাবার চেখে দেখা আর ঘুম- নেটওয়ার্ক থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে কয়েকটি দিন এভাবেই কাটিয়ে দিলাম। আগুনের পাশে বসে রান্না হতে হতে গল্প গুজবে মেতে উঠা, হোলি খেলা, অতিথির মত এসে বন্ধু হয়ে যাওয়া এই গ্রামের সময়টুকু আমাদের দুজনের জন্য অনেক ইম্প্যাক্টফুল ছিল।

আগামীকাল আনিকা কাঠমান্ডু চলে যাবে। ওর ছুটি শেষ হয়ে গেছে। আর আমি চলে যাব রোলওয়ালিং উপত্যকা। আগামীকাল থেকে আমি অফিসিয়ালি একা হয়ে যাচ্ছি সেই সাথে আমার অভিযানের ট্রেকিং পার্ট শুরু হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল সন্ধ্যায় আমি সিমিগাও চলে যাবার চেষ্টা করব। সিমিগাও থেকেই আমার অভিযাত্রা শুরু হবে। মোস্ট প্রোবাবলি সিমিগাও থেকে আমি ২১ বা ২২ তারিখে সামনে মুভ করা শুরু করব।

বিয়ের পর এটা আমার প্রথম হিমালয়ে কোন অভিযান। আর প্রথম অভিযানেই আমি কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে বসে আছি। শেষবেলায় বিদায় মুহুর্ত  যত ঘনিয়ে আসছে, আনিকা একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েছে। শুনেছিলাম পর্বতারোহীরা চূড়ান্ত রকমের স্বার্থপর হয়। আমার একাকি অভিযান তো আমি উপভোগ করব কিন্তু আমার এই উপভোগের জন্য পুরোটা সময়জুড়ে কাছের মানুষদের কতটা মানসিক চাপ সহ্য করে যেতে হয় সেটা হয়ত কখনোই আমরা বুঝে উঠতে পারি না। অনেকেই বলেছিল বিয়ের পর আর পাহাড় টাহাড় যাওয়া হবে না; তারা নিশ্চয়ই আনিকাকে চিনে না। ও সাথে থাকায় আমার পাহাড়ে যাওয়া আরও স্মুধ হয়ে গেছে। ওর মত সাপোর্টিভ ওয়াইফ কিভাবে যেন আমার কপালে জুটে গেছে। 

শুধু আনিকা নয়, আমি ভাগ্যবান, আমার কাছের সবাই যতই তাঁদের কষ্ট হোক না কেন এই পরিকল্পনাগুলোতে তাঁদের সাপোর্টের কখনোই কোন কমতি হয় না। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। পাহাড়ে গেলে আমার জন্য সবচেয়ে বেশী আতঙ্কিত থাকে বোধ হয় আমার মা, প্রতিটা মুহুর্ত টেনশন করবে। এতগুলো বছরেও তাঁর এই উদ্ভট সব চিন্তা আমি দূর করতে পারি নাই। আর পারব বলে মনেও হয় না। আমাকে নিয়ে টেনশন করলেও সেই আমার সবচেয়ে বড় সাপোর্ট। আপি তো আছেই বাফার জোন। আব্বুও সবসময় বেশ আগ্রহ নিয়ে আমার অভিযান বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়। অভিযানের বইটই পড়ে অনেক কিছুই তাঁর কাছে এখন আর বুঝিয়ে বলা লাগে না। ইনফ্যাক্ট, বঙ্গোপসাগরে যে একটি ডিপ্রেশন জন্মেছে আর দিন দুয়েকের মধ্যেই ল্যান্ডফল করবে আজ নেটওয়ার্কে ফিরে তাঁর কাছেই প্রথম এই খবর পেয়েছি। পর্বতারোহীর আপনজনদের পার্স্পেক্টিভে পর্বতারোহণ অনেক ইন্টারেস্টিং একটা সাবজেক্ট। এই বিষয়ে সামনে বিস্তারিত লিখার ইচ্ছা আছে।

আমি হিমালয়ে আসব আর বঙ্গোপসাগর ডিপ্রেসড হবে না এমন রেকর্ড এখন পর্যন্ত নেই। এই ডিপ্রেশনের গতিপ্রকৃতি ভালোভাবে ফলো করছি। ওয়েদার প্যাটার্নে এখনো কোন পরিবর্তন আসেনি। ওয়েদার পরিবর্তন হলে আমিও সেইভাবে আমার পরিকল্পনা এডজাস্ট করে ফেলব। 

আপাতত এই ছিল আপডেট। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আর এই অভিযানের মুখ্য উদ্দেশ্য আলীকদমের দুর্গম পাহাড়ে অংকুরিত ম্রো শিশুদের স্কুল ওয়াংনিম কিয়াং এর কথা ভুলে যাবেন না। মেঘের দেশের এই স্কুলের জন্য আমরা আগামি এক বছরের ফান্ড কালেক্ট করছি। এর জন্য আমাদের দরকার মাত্র  এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা। 

আপনাদের অনুদান পাঠাতে: 

একাউন্টের নাম: AUDREE

একাউন্ট নম্বর: 1111100033530

ব্যাংক: DUTCH- BANGLA BANK LTD

ব্রাঞ্চ: NARAYANGANJ 

এছাড়া বিকাশ করতে পারেন: 01920833009 (মার্চেন্ট একাউন্ট) , কাউন্টার- 1 

 রেফারেন্স হিসেবে প্লিজ C4E লিখে দিবেন। আমাদের ট্র‍্যাক করতে তাহলে সুবিধা হবে। 

ডিসপ্যাচের সাথে বিগত দিনগুলোর কিছু মুহুর্তের ছবি যোগ করে দিলাম। আশা করি ভালো লাগবে।

গতকাল ছিল হোলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!