মাঝে মাঝেই আমার মনে হয় কতটা ভাগ্যবান হলে আমি এমন এক পাহাড়কে, পাহাড়ের মানুষকে, পাহাড়ি জীবনব্যবস্থাকে চাক্ষুষ করতে পেরেছি যা এখনো প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে আছে। সুন্দর প্রকৃতি, সবুজ পাহাড়, উচ্ছ্বল ঝিরি, ভৌগলিক রহস্যই শুধু নয়, পাহাড়ের বৈচিত্র্যময় মানুষ ও তাদের সংস্কৃতি জীবন সম্পর্কে আমার চিন্তাভাবনাই পাল্টে দিয়েছে।
চূড়ান্ত ভোগবাদী পৃথিবী দিয়ে ঘিরে থাকা আমি এমন সমাজও দেখেছি যারা সত্যিকার অর্থেই স্বাধীন। পচেগলে যাওয়া তথাকথিত সভ্য সিস্টেম থেকে নিজেদের তারা কি সুন্দর করে আগলে রেখেছেন। জীবনের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, যতটুকু আমি আদপেই হজম করতে পারব ঠিক ততটুকুই আমার দরকার। এর বেশীর তো প্রয়োজন নেই জীবনে। প্রশান্তির জন্য স্থবিরতা খুব প্রয়োজন, জীবন গতিময় হয়ে গেলে খামোখাই জটিল হয়ে যায়।
ঘন অরণ্যে পথ চেনা, আগুনের জন্ম দেয়া, হাত দিয়ে মাছ ধরা, মাটির গন্ধ, প্রকৃতির শব্দ শুনতে শেখা, ঘোরতর বিপদে মাথা ঠান্ডা রাখার মত গুরুত্বপূর্ণ লাইফ হ্যাকসগুলো আমি তাঁদের কাছেই শিখে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। একদিকে কৃতজ্ঞতায় আমি নুয়ে যাই আরেক দিকে প্রচন্ড আফসোস হয়- যততটুকু নিয়েছি তার বিনিময়ে তাঁদের জন্য কিছুই করতে পারলাম না।
আমার চোখের সামনেই সেই পাহাড় আর পাহাড়ের মানুষগুলো পাল্টে যাচ্ছে। তারচেয়েও বেশী আফসোস তাঁদের প্রকৃত সমস্যাগুলো কাছ থেকে দেখার পরেও সেগুলো নিয়ে জানাতে পারিনি। সমাধান তো অনেক পরের কথা।
বিগত দিনের অভিজ্ঞতা বলছে, প্রপঞ্চময় সহজ উন্নত জীবনের হাতছানি আর প্রকৃতি প্রদত্ত প্রশান্তির প্যারাডক্সে পড়ে এই জীবদ্দশায় শক্তিশালী সভ্যতার গ্রাস দেখে যেতে হবে। তারপরেও আশা করি, কেউ কখনো বুঝবে আমরা কি হারাচ্ছি, আর আমাদের কি পাবার সম্ভাবনা ছিল।
ছবি: আশফাক হাসান/ ২০১১
2 Responses
আপনার লিখা বেস্ট! পাহাড়ে যে দু একবার গিয়েছি, সেখানে পাড়াগুলোয় থেকে বা ফিরে আসার পর ঠিক এই কথাগুলোই রিয়েলাইস হয়েছে। আজকাল কোনকিছুতে গুরুত্ত লাগেনা। পাহাড়ের কাছ থেকে আল্লাহর যে পরিচয় পেয়েছি, এরপর এই শহুরে জীবন কে জাস্ট ইলিউশন মনে হয়।
ধন্যবাদ।